বিয়ে করার সময় মাথায় টোপর/মুকুট পরা হয় কেনো?

বাঙালি বিবাহ অনুষ্ঠানে নানা বিধ ঐতিহ্য প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বড় বধূ টোপর/মুকুট পরিধান করা একটি। আধুনিক সমাজে টোপর প্রসঙ্গে নানাবিধ মত প্রচলিত থাকলেও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রথা হিসাবে বাঙালি বিবাহে এটি একটি অপরিহার্য পরিধান হিসাবে বিবেচিত হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, টোপর সৌভাগ্য এনে দেয়। সাধারণত কনের বাড়ি থেকে টোপর পাঠানো হয় বরের বাড়িতে। বিবাহ অনুষ্ঠানের পূর্বে বর টোপর মাথায় দিয়ে ছাদনাতলায় উপস্থিত হয।
বিবাহ অনুষ্ঠানে টোপর শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যের কারণেই পরা হয় না, টোপর পরিধানের বিশেষ ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে এবং তা পরা বরের অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। এই কারণে টোপর নিয়ে হিন্দু সমাজে নানাবিধ সংস্কারও রয়েছে। টোপর খুব সাবধানে ব্যবহার করা হয়। টোপর ভেঙে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যের লক্ষণ বলে মনে করা হয়। টোপর বা শোলা নির্মিত যে কোনো সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেলে তাকে জলাশয়ের গর্ভে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। লোকবিশ্বাস, এতে ভাঙা জিনিসটি নিয়ে কেউ ব্যবহারকারীর ক্ষতি করতে পারে না।
আসুন দেখে নেওয়া যাক টোপর পরিধান করার রীতি কিভাবে প্রচলিত হয়েছে।
টোপরের উৎপত্তি সংক্রান্ত কিংবদন্তিটি হিন্দু দেবতা শিবের বিবাহ-সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ উপাখ্যানটির সঙ্গে জড়িত। উক্ত কিংবদন্তি অনুযায়ী, মহাদেব নিজের বিবাহ অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ মুকুট (মাথায় পড়ার বাস্তু) পরার ইচ্ছার পোষণ করেন এবং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে তা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু বিশ্বকর্মা ছিলেন ধাতুশিল্পী। তিনি শিবের চাহিদামতো মুকুট নির্মাণে ব্যর্থ হন। তখন মালাকার নামে এক ব্যক্তি জলা অঞ্চল থেকে শোলা সংগ্রহ করে শিবের জন্য এক বিশেষ মস্তকাবরণী প্রস্তুত করে দেন। এই মস্তকাবরণীই “টোপর” নামে পরিচিত। কথিত আছে, মালাকারের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে শিব তাকে নিজের ব্যক্তিগত হস্তশিল্পী নিয়োগ করেছিলেন। সেই প্রথা মেনে আজও মালাকার সম্প্রদায় বিবাহের জন্য টোপর প্রস্তুত করে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের শোলা শিল্পী মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের এই মালাকারের বংশধর মনে করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top