প্রতি মাসের শুক্ল পক্ষ এবং কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে প্রদোষ ব্রত পালন করা হয়। প্রতি মাসের উভয় ত্রয়োদশী তিথিই ভগবান শিবকে উত্সর্গ করে এই ব্রত উদযাপন করা হয়।
এই তিথি ভগবান ভোলেনাথের খুব প্রিয়। এই দিন ভগবান মহাদেবের অগণিত ভক্তরা নানান নিয়ম মেনে উপবাস ও পুজো করেন। বলা হয় প্রদোষ ব্রতের শুভ সময়ে কোন ভক্ত যদি উপবাস রেখে ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতীর আরাধনা করেন তাহলে তিনি বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করেন। জীবনের সমস্ত সমস্যার নিরসন ঘটে।
ব্রত কথা?
একদা ইন্দ্র ও বৃত্তাসুরের সেনার মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। দৈত্য-সেনাকে পরাজিত করে তাদের নষ্ট করে দেন দেবতারা। তা দেখে ক্ষুব্ধ বৃত্তাসুর স্বয়ং যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়। মায়ার সাহায্যে সে বিশাল রূপ ধারণ করে। ভীত দেবতারা বৃহস্পতির শরণে পৌঁছন। তখন বৃহস্পতি বলেন, ‘প্রথমে আমি তোমাদের বৃত্তাসুরের আসল পরিচয় জানিয়ে দিই।’
বৃত্তাসুর তপস্বী এবং কর্মনিষ্ঠ। গন্ধমাদন পর্বতে ঘোর তপস্যা করে শিবকে প্রসন্ন করে সে। পূর্বজন্মে চিত্ররথ নামক রাজা ছিল সে। একদা নিজের বিমানে কৈলাশ পর্বতে যায়। সেখানে শিবের বাম অঙ্গে পার্বতীকে দেখএ উপহাস করে বলেন, – ‘হে প্রভু! মোহ-মায়ায় জড়িয়ে থাকার কারণে আমরা মহিলাদের বশে থাকি। কিন্তু দেবলোকে এমন দেখা যায়নি যে স্ত্রী আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে সভায় বসে রয়েছে।’
চিত্ররথের এই কথা শুনে শিব, হেসে বলেন, – ‘হে রাজা! আমার দৃষ্টিকোণ পৃথক। আমি মৃত্যুদাতা-কালকূট মহাবিষ পান করেছি, তা সত্ত্বেও তুমি সাধারণ মানুষের মতো আমার উপহাস করতে পারছ।’ ক্ষুব্ধ পার্বতী চিত্ররথকে বলেন – ‘দুষ্ট! তুই সর্বব্যাপী মহেশ্বরের সঙ্গে আমার উপহাস করেছিস। আমি তোকে এমন শিক্ষা দেব, যাতে তুই আবার সন্তদের উপহাস করার দুঃসাহস করতে না-পারিস। তুই দৈত্য স্বরূপ ধারণ করে বিমান থেকে নীচে পড়ে যা, আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি।’
এই অভিশাপের কারণে রাক্ষস যোনি লাভ করেন চিত্ররথ এবং ত্বষ্টা নামক ঋষির শ্রেষ্ঠ তপ থেকে উৎপন্ন হয়ে বৃত্তাসুর নাম ধারণ করে। বৃহস্পতি বলেন, – ‘বাল্যকাল থেকে শিবভক্ত ছিল বৃত্তাসুর। অতএব হে ইন্দ্র! তুমি বৃহস্পতি প্রদোষ ব্রতকে শিবকে প্রসন্ন কর।’ এর পর বৃহস্পতি প্রদোষ ব্রত পালন করেন ইন্দ্র। এর পর শীঘ্র বৃত্তাসুরের ওপর জয় লাভ করেন এবং দেবলোকে শান্তি বিরাজ করে।
এই ভাবে মর্ত লোকে ব্রত প্রচার ঘটে, এই ব্রত উদযাপন করে ভোলানাথ মহেশ্বরের কৃপা লাভ করা যায়।